বর্ষার দূত ‘কদম ফুল’ পাখা মেলে আছে

জিল্লুর রহমান জয়: কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত।রূপসী তরুর অন্যতম রূপবতী হলো কদম ফুল। গাছে গাছে সবুজ পাতার ডালে শ্রাবণের এই ভরা মৌসুমে বিলুপ্ত প্রায় ফুলটি নানা লোকালয়ে পাখা মেলতে শুরু করেছে। বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ছন্দ তুলছে যেন নিজ মননে। বিলুপ্তির পথে এই কদম ফুলটি অনেকেই শখ করে লাগাচ্ছে বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার ধারে। কেউবা স্কুল ও কলেজ ক্যাম্পাসে লাগিয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু স্থানেও শোভা পাচ্ছে এই কদমফুল।

গোলাকার মাংসল পুষ্পাধার আর তার থেকে বের হওয়া সরু হলুদ পাপড়ির মুখে সাদা অংশ কদমকে সাজিয়ে তুলেছে ভিন্নভাবে। গোলাকার হলদে-সাদা মিশ্রিত ফুলটি দেখতে যেন ভোরের ঊষা। বর্ষার মেঘের সঙ্গে মিতালি বলেই কি না, এর আরেক নাম মেঘাগমপ্রিয়। ‘এমন দিনে তারে বলা যায়/এমন ঘনঘোর বরিষায়/এমন দিনে মন খোলা যায়-’ কিংবা ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী/উড়ে চলে দিগ্-দিগন্তের পানে’- রবি ঠাকুরের কবিতার মতো এভাবেই বৃষ্টিস্নাত সজীবতার রূপ নিয়ে হাজির হয় বর্ষা। রূপময় ঋতু বর্ষার যেন মেঘবতী জলের দিন। বৃষ্টির সঙ্গে কদমের ভালোবাসা তাই খুবই নিবিড়।

সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিডইয়ানের মীরসরাই সদরের উত্তর পার্শ্বের অংশে বেশ কিছু কদম গাছে ফুল ধরা শুরু করেছে। এতে বিমোহিত পথচারীরা। কদম ফুল সবাই পছন্দ করে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা কদম ফুল নিয়ে খেলা করে। ফুলে ভরা কদমগাছ দেখতে অসাধারণ হলেও এর আর্থিক মূল্য খুব কম। কাঠ নরম বলে আসবাবপত্র তৈরি করা যায় না। কাঠ দিয়ে দেয়াশলাই ও কাগজ তৈরি হয়ে থাকে। শুধু সৌন্দর্য নয়, ভেষজ গুণের পাশাপাশি কদমের রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্বও। কাঠ দিয়ে কাগজ, দেয়াশলাই ছাড়াও তৈরি হয়ে থাকে বাক্সপেটরা।

আর কদমের ছাল, পাতা কিংবা ফুলের রস পিপাসা নিবারণের পাশাপাশি কৃমি ও জ্বরনাশক এবং বলকারক।
নাগরিক উঠানে সেই কদমের ঘ্রাণ কদিন আগেও অনেকটাই যেন অতীত ছিল। রিমঝিম জলে কদমের কোমলতা যেন খুঁজে পাওয়া ভার। চোখ জুড়ানো ঘন সবুজ পাতার মাঝে হলুদ বন্ধুতায় চিরচেনা কদম গাছ এখন আবার চোখে পড়ছে নানা প্রান্তরে। কদমতলে বংশীও বাঁজানো যেন প্রাচীনতম অন্যমত মরমি লোকজ। কদম নিয়ে রয়েছে রূপকথার নানা কল্পকাহিনী।

যান্ত্রিক সভ্যতা ও নগরায়ণের যুগে কমতে শুরু করেছিল কদমগাছ। সরকারের উদ্যোগে আবার ফিরে আসছে কদমপ্রাণ। আদিকাল থেকে কদম ফুল বর্ষার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে যাচ্ছে। কদমফুল ছাড়া বর্ষা যেন একেবারে একা, নিঃসঙ্গ। মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, আমরা প্রতিটি নার্সারিকে উদ্বুদ্ধ করে কদম গাছ রোপণ অব্যাহত রেখেছি। এই উপকারী বৃক্ষ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।