‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা’ কথাটা শুনলে যারা ক্ষেপে, তারা নারীদের নিয়ে ঢালাও মন্তব্য করে

সাবরিনা শুভ্রা

নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলন যত শক্তিশালী হচ্ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমান তালে জোরদার হচ্ছে এই আন্দোলনের বিরোধী মিসজিনিস্টদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরও। লক্ষ্য করেছি ‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা’ কথাটা শুনলে যারা ক্ষেপে যান তারাই দীর্ঘ দিনের সামাজিক কন্ডিশনিং এর বদৌলতে সৃষ্ট নারীর আচার-আচরণ নিয়ে অসংবেদনশীল ঢালাও মন্তব্য করতে থাকেন।

ইদানিং নারীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু অভিযোগ ঘুরে ফিরে আসছে- আচ্ছা নারী ঠিক কী করলে আপনারা খুশি হবেন বলুন তো? সে পার্লারে গিয়ে চুল কাটলে আর সাজগোজ করলেও সমস্যা, আবার প্যান্ট শার্ট পরে বাইকে পা ছড়িয়ে বসে সিগারেট খেলেও সমস্যা? সমস্যা নেই কোনটায়? কোনও অভিব্যক্তি না থাকায়? কোনও প্রকাশ না থাকায়? চুপ করে শুধু রান্নাবাড়া গোছগাছ করে যাওয়ায়?

নারীর রূপ নিয়ে কাব্য রচনা করে আসছে পুরুষ সেই আদিম কাল থেকে। এসব কাব্য পড়ে বড় হয়েছে যে নারী, ছোট থেকেই যার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে দেখতে সুন্দর না হলে বিয়ে হবে না, সেই নারী সাজবে না তো কী করবে? যে সমাজে কালো মেয়ের বিয়ে হয় না, আবার বিয়েই মেয়েদের জীবন আর জীবিকার একমাত্র নিশ্চয়তা, কুড়িতেই যে সমাজে নারীকে বুড়ি ধরা হয়, সেই সমাজে ইনসিকিউরিটির অনুভূতি থেকে মেয়েরা এসব করবে সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? অনেক সময় দেখা যায় শিক্ষিত সুযোগ-পাওয়া মেয়েরাও নিজেকে পণ্যের মতো উপস্থাপন করছে কিন্তু মনে রাখতে হবে বিষয়টা একদিনের নয়, এক নারীরও নয় বরং হাজার বছরের কন্ডিশনিং এর, একটা প্রতিষ্ঠিত ট্রেন্ডের।

ভেবে দেখতে হবে, নিজের ব্যক্তিত্ব বা চিন্তাভাবনা বিকাশের কতটুকু সুযোগ একজন নারী পায়? শিক্ষা দীক্ষার সুযোগ কতদিন ধরে নারীর হাতে এসেছে? এসব হুটহাট করে মন্তব্য করার নয় বরং গভীর ভাবে ভেবে দেখার, উপলব্ধি করার বিষয়।

 

লেখক : শিক্ষক, গবেষক ও কলামিস্ট/সাবরিনা শুভ্রা