“নির্বাচন নির্বাচন খেলা আর কত, টেইক ব্যাক বাংলাদেশ”

সায়েক এম রহমান

বিশেষ প্রতিবেদকঃ অলিদ তালুকদার: বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ড টি আজ পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে আছে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায়।! বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ এযাবৎ সব চাইতে কঠিন সময়ে পতিত এ ভূখণ্ডটি। সত্য বলতেই হবে, আওয়ামী লীগ এই ভূখণ্ডের প্রাচীনতম দল। যে দলটি বায়ান্ন, উনসত্তর, সত্তর ও একাত্তরের নেতৃত্বদান কারী দল,যে দলকে সামনে রেখে এ ভূখণ্ডের মানুষ আইয়ুব – এহিয়ার কাছ থেকে গণতন্ত্র কেড়ে এনেছে।
আজ পরিতাপের সাথে বলতে হচ্ছে,,, সেই দলটি আজ এই ভূখণ্ডের গণতন্ত্রকে বারবার ধর্ষণ করছে, বার বার এ দেশের মানুষের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করছে। শুধু এখানেই শেষ নয়,,,,আজ দেশের মালিকানা লুট, সংবিধান লুট, সেনাবাহিনী লুট,আদালত লুট, মানুষ লুট, ব্যাংক লুট, সোনা লুট, কয়লা লুট, মানুষের স্বাধীনতা লুট, এমন কি শেষ পর্যন্ত প্রেস ক্লাবের মত স্পর্শ কাতর জায়গাটি ও লুট! আর ধর্ষণ খুন-গুম ও গায়েবি মামলা হামলা তো চলছে -ই।আজ দেশের সাধারণ মানুষ তাদের মালিকানা হারিয়ে ফেলেছে। যারা একাত্তরে খালি পায়ে ছেঁড়া কাপড় পড়ে বন্দুক চালিয়ে যুদ্ধ করে পাক হানাদার কাছ থেকে ভূখন্ডকে উদ্ধার করে ছিল, তারা আজ তাদের ভূখণ্ড ফেরত চায়, দেশ ফেরত চায়, তাদের মালিকানা ফেরত চায়। টেইক ব্যাক বাংলাদেশ।

এক. পাঠক যখন লিখতেছি অনেকগুলি ঘটনা রটনা সামনে হাজির। কোন ইস্যুতে লিখি? কোন কোনটা রাখি, কোনটা ছাড়ি!
একদিকে প্রেস ক্লাবের মত জায়গায় রাজনৈতিক অনুষ্টানাদি স্থগিতকরণ, অপর দিকে প্রতিবারের মতন নির্বাচন খেলা শুরু, আর পূজামন্ডপ ও প্রতিমন্ত্রী মুরাদ সাহেবের বয়ান, মানুষের অবশ্য বুঝতে বাকি নেই প্রতিমন্ত্রী মুরাদ সাহেবের বয়ান এবং পূজা মন্ডপ এক-ই সুতায় গাঁতা! এছাড়া সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে প্রধানমন্ত্রীর বয়ানে তৈলা সাংবাদিকদের তৈল মর্দন! কোন দিকে যাই। মনস্থির করলাম,,,,,

আজ শুনব এই ভূখণ্ডে শেখ হাসিনার নির্বাচন গল্প।,,,, “প্রথমেই বলব এই ভূখণ্ডের ইতিহাস বলে ২০০৮ সালে মইন- ফখরুদ্দিনের সব কার্যক্রমকে বৈধতা দিয়ে নীল নকশার নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন”।
অতঃপর বলব ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বাংলাদেশের ইতিহাসের কলঙ্কিত দিনটির কথা। যে দিনটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভোটহীন প্রার্থীহীন নির্বাচন। যেই নির্বাচনটি বিশ্ব স্বীকৃত তামাশার নির্বাচন নামে পরিচিতি লাভ করে আছে । অনেকের হয়তো ভুলে যাওয়ার কথা তাই আবারও বলছি যেখানে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসন ছিল প্রার্থীশূন্য। বাকি ১৪৬টি আসনে ভোট পড়েছিল শতকরা পাঁচ শতাংশের নিচে! সেই দিনকে ক্ষমতাসীন আঃ লীগ এযাবৎ নির্লজ্জের মত গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসাবে পালন করে আসছে আর বিএনপি এই কলঙ্কিত দিনটকে গণতন্ত্রের হত্যা দিবস হিসাবে পালন করে আসছে যদিও এখন আগের মতন মাঠ গরম দেখা যায় না।

দুই. উল্লেখ্য হাস্যরসের নির্বাচনের ছয় মাস পর শেখ হাসিনা বৃটেন গেলেন ২২ জুলাই ২০১৪, তামাশার নির্বাচন পর সম্ববত এটাই ছিল প্রথম সফর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এর মিটিং হলে, প্রধানমন্ত্রী ক্যামারুন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে তাঁহার হতাশার কথা প্রকাশ করেছিলেন এবং আলোচনায় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা স্থান পায় এবং একটা মুক্ত সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গুরুত্বের প্রশ্নে একমত হন দুই প্রধানমন্ত্রী। এই আলোচনার ভিত্তিতে ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেন। অতঃপর দুইমাস অপেক্ষার পর ১৭ অক্টোবর ২০১৪, বৃটেন আনুষ্ঠানিক ভাবে হতাশার কথা প্রকাশ করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ে।

এ ছাড়া বাংলাদেশে প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত যুক্তরাষ্টের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়ার্স স্টিফেন্স বম বার্নিকাট যুক্তরাষ্ট পররাষ্ট্র বিষয়ক সিনেট কমিটির সামনে বাংলাদেশ বিষয়ে তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, ” ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন নিঃসন্দেহে ক্রটিপূর্ন ছিল এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো জরুরি ভিত্তিতে গঠণমূলক সংলাপে অংশ গ্রহণ করা দরকার। যাতে করে প্রতিনিধিত্ব সরকার গঠণের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। তখন ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও এ ব্যাপারে একমত প্রকাশ করেছিল। কিন্তু সবই ভেস্তে গেছে! দাদা বাবুদের ইশারায়, খায়েস-ই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল ।

পাঠক,,মজার ব্যাপার হল,,,কিছু দিন পর আঃ লীগের ২০তম কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নির্বাচনকে নিয়ে অনেক কথাই বলেছিলেন, একটি কথা ছিল আগামী দিনের নির্বাচন প্রশ্ন বিদ্ধ করলে আর চলবে না! তাঁহার এই কথাটির মাধ্যমে পরিস্কার ভাবে নিজ বাক্য ব্যয়ে প্রমানিত হয় হয়েছিল যে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সহ তাঁহার অধীনে সব কটি নির্বাচনই প্রশ্ন বিদ্ধ হয়েছিল।

এছাড়া জাতি অবগত, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পূর্বে শেখ হাসিনা জনগণকে প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন, তিনি না কি সংবিধানিক আইন রক্ষার জন্য এই নির্বানটা করছেন। নির্বাচন পর সবাইকে নিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শীঘ্রই আরেকটি নির্বাচন দিবেন। এভাবে ই শেখ হাসিনা কলা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে সব কটি কাজ অগণতান্ত্রিক ভাবে করেছেন। এই তথ্য প্রযোক্তির যুগেও তিনি কথা বেমালুম-ই ভুলে গেছেন, অস্বীকার করছেন। কিন্তু কথা রয়ে গেছে ইতিহাসের কালো পাতায়!

তিন. এখন চলে আসি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন অধ্যায়ে,,,,,,,,
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনটি ভোটের দিনের আগের রাতে ভোট সম্পূর্ণ করে শেখ হাসিনা এই নির্বাচনকে ভোট ডাকাতির নির্বাচন বা মিড নাইট প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইতিহাসের পাতায় কালো অধ্যায় হয়ে আছেন।

বিশ্বসহ সারা জাতি অবগত, সেদিন গণতন্ত্রের প্রতীক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী এদেশের মানুষের সব চাইতে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টুনকো মামলায় বন্দী করে, তার সাথে প্রায় ৭০ হাজারের অধিক নেতাকর্মীদের পরিকল্পিত ভাবে জেলে রেখে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পরিকল্পিত ভূয়া সাজা দিয়ে নির্বাসনে রেখে, এখানে ক্লান্ত নয় কয়েক লক্ষ নেতাকর্মীদের মাথায় গায়েবি মামলার হুলিয়া জারি রেখে, নির্বাচনের মাটকে আকাশ -পাতাল ব্যাবধান করে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ পৃথিবীর সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে,

মন্ত্রীসভা বহাল রেখে, পুরো একটি রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, সিভিল প্রশাসন, একদল নির্বাচন কমিশনার সহ লক্ষাধিক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বানিয়ে, সর্ব ক্ষমতায় ক্ষমতাবান হয়ে এই ভূখণ্ডে একটি অভূতপূর্ব সৌখিন নির্বাচন করলেন! ভোট ডাকাতির নির্বাচনে ২৯৯ টি আসনের মধ্যে ২৮৮ টিতে বিজয় নিশান উড়ালেন!

নির্বাচনের দুই দিন পর ৩রা জানুয়ারি জার্মানীর পার্লামেন্টে পররাষ্ট্র বিষয়ক চেয়ারম্যান নরবার্ট রজেন এই নির্বাচনকে নিয়ে টুইট বার্তায় লিখেছিলেন,” বাংলাদেশের নির্বাচনের কারচুপির মাত্রা দেখে আমি বিস্মিত”! এতে দেশটিতে কার্যকর ভাবে একদলীয় সরকারের শাসন চালু হয়েছে।
আর বিশ্বখ্যাত দ্যা ইকোনমিস্ট (৩রা জানুয়ারি) পত্রিকার প্রতিবেদন ছিল,” একছত্র ক্ষমতা -ই আওয়ামী লীগের জন্য কাল হতে পারে!
এই হলো এই ভূখন্ডে শেখ হাসিনার নির্বাচনের গল্প!

চার. এবার নির্বাচন নির্বাচন আর নয়! নির্বাচন অনেক হয়েছে। ২০১৮ সালে নেতারা বলছিলেন দেশনেত্রী কে মুক্তি না দিলে নির্বাচনে যাব না! আর এইবার কারো কারো মুখে শুনতেছি নিরপেক্ষ সরকার না হলে নির্বাচনে যাব না, অংশ নিতেও দিব না! এ সমস্ত ডায়লগ বহু শুনেছি আর মানুষ শুনতে চায় না। এখন প্রয়োজন শুধু একটি গণঅভ্যুত্থান। একটি গণবিপ্লব।

এই ভূখণ্ডের নির্বাচন তো সেই দিন-ই শেষ হয়েছে, যে দিন ৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তির সুগভীর পরিকল্পনায়, সরকারের অধিকাংশ নীতিনির্ধারক ও রাজনীতিবিদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে থাকা সত্ত্বেও, শুধু মাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিপক্ষে থাকায় সুপ্রিমকোর্টের রায়ের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। সেই দিন থেকে-ই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ত্ব, গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।

যারা একাত্তরে ছেঁড়া জুতা ছেঁড়া কাপড় পড়ে এক সপ্তাহের ট্রেনিং করে বন্দুক কাঁদে নিয়ে যুদ্ধ করে পাক-হানাদারদের কাছ থেকে কেড়ে এনেছিল এক সাগর রক্তের বিনিময়ে একটি লাল সূর্য! একটি পতাকা ! একটি মানচিত্র! যেখানে ছিল স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ত্ব ও গণতন্ত্র! আজ দেশের মানুষ সব কিছু হারিয়ে ফেলেছে! আজ সাধারণ মানুষ বাঁচতে চায়। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ত্ব ফেরত চায়। দেশ ফেরত চায়, দেশের মালিকানা ফেরত চায়। টেইক ব্যাক বাংলাদেশ।

 

লেখক ও কলামিস্ট | আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক | উপদেষ্টা শীর্ষ খবর ইউকে |