৫-৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীনতায় গ্রামীণ জনপদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দেশের ৮০ শতাংশের বেশি গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে। বিতরণ কোম্পানিটির তথ্যমতে, গত শনিবার বেলা ৩টার দিকে ১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করেছে তারা। এ সময় সারা দেশে চাহিদা ছিল ৬ হাজার ৯৬৩ মেগাওয়াট, সরবরাহ হয়েছে ৫ হাজার ৯২৯ মেগাওয়াট। এদিন আরইবির বিতরণ এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয়েছে ঢাকা জোনে। সবচেয়ে কম বরিশাল জোনে।

আরইবির কর্মকর্তারা বলছেন, রমজান ও সেচ মৌসুমের কারণে এখন বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। তার পরও সেই তুলনায় উৎপাদন বাড়াচ্ছে না বিপিডিবি। ফলে দিন-রাত লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরইবির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার দুটি বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি ও ডেসকো) ছাড়া বাকি পাঁচটিই চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণের কোম্পানি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। অথচ দেশের অর্ধেকের বেশি গ্রাহক আরইবি কাভারেজের আওতাধীন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ২৫ শতাংশ ঘাটতির কারণে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে প্রতিদিন ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।

ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া সেচ মৌসুম সামনে রেখে নির্দেশনা জারি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। নির্দেশনায় চলতি সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কৃষকদের অফ-পিক আওয়ারে (রাত ১১টা থেকে পরের দিন সকাল ৭টা পর্যন্ত) সেচযন্ত্র পরিচালনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) পরিসংখ্যান বলছে, সম্প্রতি প্রায় প্রতিদিনই গড়ে ২-৩ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। এই লোডশেডিংয়ের ৮০ শতাংশই ঢাকার বাইরে। সংস্থাটির তথ্যমতে, শুক্রবার রাত ১টা পর্যন্ত দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৩৮৭ মেগাওয়াট অর্থাৎ গড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ৩ হাজার মেগাওয়াট কম ছিল।

বিদ্যুৎ বিভাগের আরেক তথ্যে দেখা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় ব্যস্ত সময়ে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট এবং দিনের ব্যস্ত সময়ে ১৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। এর আগের সপ্তাহে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার শেষ কার্যদিবসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮২৪ মেগাওয়াট। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী গত সপ্তাহেও একই অবস্থা ছিল। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ময়মনসিংহ জোনের বাসিন্দাদের কোনো কোনো দিন ৭ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের মুখোমুখি হতে হয়। এই জোনে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র নেই।

পিডিবির তথ্য বলছে, দেশের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় ৫০ শতাংশ এখন অলস বসে আছে। গত সপ্তাহে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।

লোডশেডিং বাড়ার কারণ কী জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, গ্যাস সরবরাহের কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যেখানে গ্যাসে ৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন হয়েছিল, সেখানে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট কম উৎপাদন হয়েছে।

পিডিবির কর্মকর্তারা বলেন, চাহিদার চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ কম হওয়ায় গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দৈনিক অন্তত ২৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই চাহিদামাফিক গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে সক্ষমতার অর্ধেকও উৎপাদন হচ্ছে না। বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে ৮৭-৮৮ কোটি ঘনফুট। গ্রীষ্মে পিডিবি অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়েছে পেট্রোবাংলাকে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তেল আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলার পাচ্ছে না। পিডিবির কাছে বড় অঙ্কের বকেয়া পড়েছে তাদের। ফলে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতেও খুব বেশি উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না।